চোখের রোগ ও সমস্যা এবং প্রতিকার:
চোখ একটি অমূল্য সম্পদ এবং মানুষের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। চোখ অনেক সূক্ষ্ম একটি অঙ্গ, তাই চোখের ছোট-বড় যে কোন সমস্যা হলে অবহেলা করা উচিৎ নয়। অবহেলা করলে সারাজীবনের জন্য অন্ধত্বের সৃষ্টি হতে পারে। চোখের এই সব সাধারণ রোগ বা সমস্যাগুলোর সঠিক চিকিৎসা বা যত্ন নেওয়া হলে অন্ধত্বের হার অনেকাংশে কমে যাবে। তাই আজ আমরা চোখের রোগ ও সমস্যা এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব।

চোখের সমস্যাগুলোর প্রধান কারণগুলি হলোঃ
১. ছানিপড়া
২. দৃষ্টি শক্তি সমস্যা
৩. নেত্রনালী প্রদাহ
৪. গ্লুকোমা
৫. ইউভিয়াইটিস
৬. চোখ টেরা
৭. চক্ষুগোলকের বাইরের রোগ
৮. চোখ লাল হওয়া
৯. চোখ ওঠা
১০. চোখে অ্যালার্জি

চোখের রোগ ও সমস্যা এবং প্রতিকার:
বাংলাদেশে প্রায় ২০ লক্ষ লোক অন্ধ যার কারণগুলি নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
১. ছানিপড়া
চোখের স্বচ্ছ লেন্স বার্ধক্য জনিত কারণে এবং অন্যান্য কারণে অস্বচ্ছ হয়। এই অস্বচ্ছ হওয়াকেই ছানিপড়া রোগ বলে। বিভিন্ন কারণে চোখে ছানি পড়ে-
- বয়স জনিত কারণে
- আঘাতের কারণে
- ডায়াবেটিস রোগের কারণে
- ইউভিআইটিস রোগের কারণে
- অনিয়ন্ত্রিত ষ্টেরয়েড ব্যবহারের কারণে

অপারেশনের মাধ্যমে ছানি রোগের চিকিৎসা করতে হয়।
২. দৃষ্টি শক্তি সমস্যা
দৃষ্টি শক্তি সমস্যা কয়েক ধরনের হতে পারে-
- অ্যাসটিগমেটিজম-
- চোখের কর্ণিয়ার এক দিকে পাওয়ার পরবর্তন হয়
- দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়
- একটি জিনিসকে দু’টি দেখা
- মাথাব্যথা হওয়া
সিলিন্ডার লেন্স ব্যবহার করলে এই সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া সম্ভব।
- প্রেসবাইওপিয়া-
- বয়স জনিত কারণে চোখের গঠন গত পরিবর্তন হয়
- লেন্সের আকার পরিবর্তনের ক্ষমতা কমে যায়
- কাছের জিনিস ঝাপসা দেখায়
- মায়োপিয়া-
- চোখের দেয়াল বা স্কে¬রা পাতলা হয়ে যায়
- রেটিনায় ছিদ্র সৃষ্টি হয়ে যায়
- চোখের দেয়াল পাতলা হয়ে যায়
মাযোপিয়া রোগীদের সব সময় চোখের আঘাত থেকে সাবধান থাকতে হবে এবং নিয়মিতভাবে ডাক্তারের পরামর্শে চোখের পাওয়ার পরীক্ষা এবং রেটিনার পরীক্ষা করিয়ে নেয়া ভালো।

৩. নেত্রনালী প্রদাহ
- চোখ থেকে পানি পড়ে
- চোকের কোণায় চাপ দিলে দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ বের হয়
- চোখ ফুলে যাওয়া
এটি খুবই ছোঁয়াচে রোগ। চক্ষু চিকিৎসকের নিয়মিত পরামর্শ ব্যতীত চোখে ড্রপ ব্যবহার করা উচিত নয়।
৪. গ্লুকোমা
যেকোনো বয়সে এ রোগ হতে পারে। জন্মের সময় বেশ বড় চোখে এবং উচ্চ চক্ষুচাপ নিয়ে জন্মালে, একে কনজেনিটাল গ্লুকোমা বা জন্মাগত উচ্চ রক্তচাপ বলে। তরুণ বয়সেও হতে পারে, একে বলে জুভেনাইল গ্লুকোমা। বেশির ভাগ গ্লুকোমা রোগ ৪০ বছরের পর হয়। এদের প্রাথমিক গ্লুকোমা বলে।
- জন্মগত বড় চোখ
- চোখ হতে পানি পড়া
- আলোতে চোখ বন্ধ করে ফেলা
অস্বাভাবিক চোখের চাপ থাকলে সমস্ত পরীক্ষার মাধ্যমে গ্লুকোমা শনাক্ত করে ত্বরিত চিকিৎসা বাঞ্চনীয়।

৫. ইউভিয়াইটিস
- চোখে আঘাত
- জীবাণুর সংক্রমন
- কানেকটিভ টিস্যু বা যোজককলার রোগ ইত্যাদি কারণে এ রোগ হতে পারে।
এ রোগের লক্ষণ-
- চোখে ব্যথা
- চোখ লাল হওয়া
- আলোতে না যেতে পারা
- মাথাব্যথা
- ঝাপসা দৃষ্টি ইত্যাদি ।
এট্রোপিন আইড্রপ ব্যবহারের ফলে রোগী সাময়িক ঝাপসা দেখলেও পরবর্তীকালে ঔষধ বন্ধ করলে আবার ঠিক হয়ে যায়। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিরেকে কোনো ঔষধ দেয়া বা বন্ধ করা যাবেনা।
৬. চোখ টেরা
- দু’টি দেখা
- দৃষ্টিস্বল্পতা
- মাথা ব্যথা ইত্যাদি টেরা চোখের লক্ষণ।
দৃষ্টিকটু বিধায় বাঁকা চোখের স্থায়ী চিকিৎসা হিসেবে অনেক ক্ষেত্রে অপারেশনকে বেছে নেয়া হয়। টেরা চোখের রোগীদের নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ ও চোখের পরীক্ষা করিয়ে নেয়া ভালো।
৭. চক্ষুগোলকের বাইরের রোগ
- ব্লফারাইটিস-
আইলিড বা চোখের পাপড়িতে অবস্থিত চুলের চুলকানি,. আলোতে চোখ বন্ধ হয়ে আসা, চোখে জালাপোড়া করা ইত্যাদিও অনুভূতি হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শে চোখের নিয়মিত পরিচর্যা ও ঔষধ সেবনে এ রোগের বার বার আক্রমণ রোধ করা সম্ভব।
- টোসিস-
এটি চোখের মাংসপেশির রোগ। এতে চোখে পাতা নিচে নেমে যায়। আঘাত, স্নায়ু দুর্বলতা,বার্ধক্যজনিত কারণে এ রোগ হতে পারে। সমস্যা খুব বেশি হলে অপারেশনের মাধ্যমে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর চিকিৎসা সম্ভব।
- চেখের অঞ্জলি-
এটি চুলের গোড়ায় অবস্থিত জিস বা মোল গ্রস্থির প্রদাহ। এতে প্রচন্ড ব্যথা হয়ে চোখের লিড ও চুলের গোড়া ফুলে যায়। ডাক্তারের পরামর্শে গরম সেক ও ঔষধ ব্যবহারে এ রোগ ভালো হয়।

৮. চোখ লাল হওয়া
কনজাংটিভার ভিতরে অবস্থিত ছোট ছোট রক্ত নালী থেকে রক্ত বেরিয়ে আসলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। দুটি কারনে চোখ লাল হয়-
- কনজাংটিভায় রক্তক্ষরণ
- চোখের ভিতর রক্তক্ষরণ
৯. চোখ ওঠা
চোখ লাল হওয়া, চোখে কিছু পড়েছে এমন বোধ হওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া, সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় চোখ লেগে যাওয়া, সব সময় পিচুটি জমা এ রোগের লক্ষণ। ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস আক্রমণের কারণে এ রোগ হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে ড্রপ ব্যবহারে আরোগ্য লাভ করা যায়।
১০. চোখে অ্যালার্জি
চোখ চুলকানো, পানি পড়া, লাল হয়ে যাওয়া, চোখে গুটি ওঠা ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ। শিশুদের এ রোগ বেশি হলেও বড়দেরও হতে পারে। শুষ্ক মৌসুমে এ রোগ বেশি হয়।
চোখ বা শরীরের যে কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চিকিৎসা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া করা উচিৎ নয়।
কি করলে আমারা আমাদের পোস্ট আরও ভাল করতে পারি এই বিষয়ে অবশ্যই মতামত প্রকাশ করবেন।
আরও কি টাইপের পোস্ট বা ক্যটাগরি আমরা যুক্ত করতে পারি এই বিষয়ে যদি মতামত থাকে তাও ব্যাক্ত করার অনুরোধ রইল।
ধন্যবাদ।
[…] বেশি হয়ে থাকে। তাই আজ ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা […]
[…] নো ক্যান্সার। আসলে যে কোনো ক্যান্সার দেহে ছড়িয়ে পড়লে তার হাত থেকে নিস্কৃতি […]
[…] করে । ফলে ক্যান্সার সহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। কিন্তু সঠিক মাপের ব্রা […]